‘আচ্ছা, মহাত্মা গান্ধী নাকি কম বয়সী মেয়েদের সাথে ন্যাংটো হয়ে শুয়ে ব্রহ্মসাধনা করতেন?’
‘আপনি যেভাবে কাজটা করলেন, তা একেবারেই সঠিক নয়’
‘আপনার কাজকর্ম দেখে মনে হচ্ছে, আপনি একজন মহান
মানুষ’
‘তোর চেহারা দেখতে একেবারে দিলদারের মত’
‘বাহ, আপনি তো দেখছি বিশাল পণ্ডিত। এত কিছু কেমনে
জানলেন?’
‘ছেলেটার
অনেক সমস্যা আছে’
‘ঐ মেয়ের ইতিহাস আমি ভালভাবেই জানি’
‘ও কি কিছু পারে?’
--হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন! এগুলো হল আমাদের চারপাশের
মানুষগুলোর কিছু পরিচিত নিন্দা, কুৎসা ও ঠাট্টা। বেশির ভাগ মানুষ পরচর্চা করে ও খ্যাতিমান ও সম্মানীয়
ব্যক্তিদের নোংরা দিক নিয়ে আলোচনা উপভোগ করে তাদের জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়ে দেয়।
যেভাবেই হোক, একজন মানুষের একটা না একটা খুঁত বের করবেই। কেউ তা প্রকাশ করে সামনা সামনি, কেউ আলোচনা করে আড্ডায়। কেউ
লিখে প্রকাশ করে, কেউ বলে আকারে ইঙ্গিতে- ঠাট্টা-তামাশা করে। মজার ব্যাপার হল, যে
যত বেশি উদ্যোগী, কর্মঠ, পরিশ্রমী ও স্বাপ্নিক- তার তত বেশি সমালোচনা ও নিন্দা হয়ে
থাকে।
কিন্তু, কেন এ প্রবণতা? আসুন জানার চেষ্টা করি এর
পেছনের কারণগুলো।
১। সফল ব্যক্তির সাফল্য অন্যের ব্যর্থতাকে স্মরণ
করিয়ে দেয়। বেশিরভাগ ব্যক্তি নিজের চেয়ে কাউকে বেশি সফল বা ভাবতে রাজি নয়। অর্থাৎ নিজেকে সে সবসময় শ্রেষ্ঠ
ভাবতে পছন্দ করে। কাজেই যে তার চেয়ে এগিয়ে গেছে বা যাচ্ছে, সমালোচনা, নিন্দা,
ঠাট্টা কিংবা খোঁড়া যুক্তি নিয়ে তাকে ছোট কিংবা অপমানিত করতে পারলে আত্মা
প্রশান্তি লাভ করে। এ প্রসঙ্গে গুণ দা’
একবার বলেছিলেন, ‘শত্রু বানানোর জন্য মারপিট করার দরকার নেই। তুমি ভালো কাজ করো
এমনিতেই তোমার শত্রু তৈরি হয়ে যাবে।’
২।
সমপর্যায় থেকে যখন একজন উপরের দিকে উঠতে থাকে, অন্যরা তখন নিজেদের হীন (Inferior) ভাবা
শুরু করে। কাজেই নানান নেতিবাচক আলোচনা, কুৎসা, ঠাট্টার মাধ্যমে তাকে ভুল প্রমাণ
করে প্রতিহত করা কিংবা তাকে টপকিয়ে নিজেকে উপরে তোলার চেষ্টাও চলে! এর ফলে, নিজের
ব্যর্থতা-অকর্মণ্যতাও ঢাকা হল, অন্যের মইও কেড়ে নেয়া হল!
৩। মানুষ মূলত নেতিবাচক ও অসুখী। কোন ব্যক্তির
সাফল্য যেমন সৌন্দর্য, বুদ্ধিমত্তা, জনপ্রিয়তা, নেতৃত্ব কিংবা কর্মদক্ষতা অন্যের
ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং তা তাকে অসুখী করে তোলে। এক জরিপে দেখা গেছে, ফেইসবুক একাউন্ট যেসব কারণে বন্ধ হয়, তার মধ্যে
দ্বিতীয় প্রধান কারণ ব্যবহারকারীর হতাশা। অন্যের
সাফল্যের প্রচার ও প্রকাশ ব্যক্তিকে একেবারে কুঁকড়ে দেয়।
৪। মানুষ স্বভাবত অন্যের উপর প্রভাব ও আনুগত্য
বিস্তার করতে চায়। কিন্তু যারা তার অধীন ও ভাবনার আনুগত্যকে অস্বীকার করে নিজের মত
চলে বা এগিয়ে যায়, তার নিন্দা ও নেতিবাচক আলোচনা তো হবেই!
৫। আপনার
হাতে যদি কোন না কাজ না থাকে, পরচর্চা কিংবা নিন্দা না করে কোন উপায় নেই! কারণ, এ ছাড়া
আপনি করবেন কি? অনর্থক আস্ফালন করা মূলত
‘অক্ষম’দেরই কাজ !
৬। ব্যক্তিগত জীবনের হতাশা, অর্থনৈতিক
অস্বচ্ছলতা, নিম্ন সামাজিক যোগ্যতা ও ক্ষমতাহীনতা (Powerlessness) মানুষের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে । কর্মচারী
ও বুয়াদের কথোপকথন নিরীক্ষণ করলে এইটা ভালো বোঝা যাবে!
৭। কোন বিষয় বা ব্যক্তি সম্পর্কে পূর্ণ ধারণার
অভাব অনর্থক আলোচনার উপদ্রব ঘটায়। অর্থাৎ অজ্ঞতা-মূর্খতার সাথে ব্যক্তির পরনিন্দার
সম্পর্ক অনেকটা সমানুপাতিক!
কাজেই আসুন, যার যার কর্তব্য ও কর্মপন্থা নিজেরা
খুঁজে নিই এবং অপেক্ষা করি সুনিশ্চিত প্রাপ্য পরিণতির!
--কামরুল কাইস
১.০৪.২০১৮
Comments
Post a Comment