Skip to main content

কামরুল কাইসের ১০ কবিতা





১. মহামারি 


স্থির সময়

অথির বেগে দ্যাখায় যেন

অসময়ের ফল।



২. মিতালি


ওসব কথা থাক-

একটু নিবিড় চঞ্চু তোমার

নদীর যেন বাঁক।


দৃশ্যে মাখো কালি‌ -

তীরে বসে দেখছি নদী

দিচ্ছি শিস আর তালি।


দন্তসমেত হাঙর ছোটে

করাল স্রোতে তোর

আমি ডাকি শান্ত দোয়েল 

তাতেই নষ্ট ভোর!


আজকে এসব রাখ-

অল্প কথার কথকতা

দূর মিলিয়ে যাক।



৩. প্রাপ্তি


মেঘের কান্না দেখব বলে আকাশে তাকিয়েছিলাম


নেই, নেই

কান্না শুধু এ মনেই।


ঊষরতা পাবো বলে মরুভূমি চেয়েছিলাম


নেই, নেই

ফুল ফোটা সবখানেই।


কাকে ছোঁব বলে যেন হাত বাড়িয়ে ছিলাম


নেই, নেই

রয়ে গেছে সে চির ভাবনাতেই।



৪. স্বাধীনতার সনেট


ভেসে ছিল দেশ যবে শোণিত ধারায়,

আর্তের ক্রন্দনে ছিল স্পর্শ বেদনার।

পাখির সুরেলা কণ্ঠ বন্ধ ছিল হায়!

হৃদয়-রক্ত ক্ষরণে বাংলা নিঃসাড়,


রবির কিরণ নেই ঊষা-নীলিমায়,

আকাশে ভাসল ধোঁয়া বারুদ বোমার

পান্থ শ্রান্তি সারল না অশ্বত্থ ছায়ায়-

অপরাহ্ণে নেমে এল নিকষ আঁধার!


মাঠের সবুজতায় রক্তিম পরশ

স্বাধীন প্রাণ স্পন্দন এলো অবশেষে-

কণ্ঠে জাগাল সংগীত সপ্তসুর এসে!

চেতনার রন্ধ্রে পূর্ণ গভীর হরষ

উচ্ছসি হল উদ্ভাস। আজো বহমান।

স্বাধীন-তটিনী-ধারা, হবে না প্রয়াণ।



৫. অপহৃত আকাশ


যদি না কখনো গোধূলির হাসি ফোটে

রাত্রির চোখ না খোঁজে মহুয়া বন,

আশিন-বায়ুর পরশ চিহ্ন ঠোঁটে

তাজা নিঃশ্বাসে জাগাবো চপল মন ।


যদি স্বপ্নেরা এলোপথে ঘুরে মরে

ভ্রুকুটির কণা-সুরকিরা করে রোধ

শুনানীর বাণী দিনলিপি করে করে

সোনালী শিখায় পুড়িও তোমার ক্রোধ।


ভ্রান্ত পথের লক্ষ্য থাকে না জানা

তর্জনী-দৃষ্টি অধঃপাতের দিক

বীর বিক্রমে হাত ধরতেও মানা-

ভুল আর ফুল দু'চোখই বুঝে নিক!



৬. যে রাখে দূরে


অকাল গর্ভপাতের আসরে জমাই শুদ্ধ কবিতার জন্মোৎসব

জারজ নিকোটিনের অট্টহাসিতে কাতর উপমা দাঁড়িয়ে থাকে

নষ্ট ল্যাম্পপোস্টের মতোন

পাপজীবী বর্ণিল অন্ধকারেও যে প্রায়ান্ধ,


ব্লাউজের কাটা গলার মতো গোল পূর্ণিমা 

গলে গলে পড়ে বোধিবৃক্ষে,

নির্বাণ-গীতিতে এ কি করূণ ভায়োলিন!


উচ্ছন্নে যাবার কালে লিখলেন কবি

পুনর্বার দৃশ্য হও, শব্দখেকো মানবী।




৭. আদৃত আশীবিষ


আমাকে ভুলে গেলে তোমার কোন দুঃখের 

অপমৃত্যু ঘটবে না কস্মিনকালেও, 

তার চে' বরং ভেনাস, জীবন্ত হও।

নৈবেদ্য রাঙাবে তোমার চন্দন-তিলক


দুঃখ বেঁচে গেলে কে নেবে আমার

মৃত্যুর দায়ভার?




৮. প্রতিবাদে পরিণাম


ঘুমাও, ঘুমাও

নির্ঘুম তোমার  চোখের পাতায় আঙুলের ডগায় আলতো ছুঁয়ে দিলাম,

ঘুমের রাজ্যে এখন সুখ নামাও।


কার্নিশ চুয়ে চুয়ে অঝোরে নামছে পৌষের আরামদায়ক শীত,

তোমার নিদ্রায় মগ্ন হোক বিবর্তনের ঐতিহাসিক রাত।


শার্সিতে হলুদ আলোর ছায়া?

ও কিছু না। ঘুমোও তো এখন।


টিপয়ের  উপর জুড়িয়ে যাচ্ছে গরম দুধের গ্লাস

এক ঢোকে সেইটুকু নিঃশেষ করে

হারিয়ে যাও মখমলের শয্যায়।


বাইরে আওয়াজ?

কই? বাচ্চারা খেলছে বোধ হয়।

পোড়া গন্ধ?

দুঃস্বপ্ন বুঝি জাগরণেও দেখো?

বিকল মস্তিষ্কের বড় ঘুম প্রয়োজন।


বাইরে যাবে?

অসম্ভব।

 লাত্থি মেরে ফেলে দেবো গাঙে,

একশ হাত গভীরেও পাবে না সাড়ে তিন হাত শরীর।


৯. বিবর্তন


শূন্যতার কতটা গভীরে ডুবে গেছি , কেউ হাত ধরল  না

কতটা  অন্ধকারে  হারিয়ে গেছি, কেউ দেখল না  

কতটা কান্নায় বুক ভিজিয়েছি, কেউ স্পর্শ করল না

কত দীর্ঘশ্বাসে ফুরিয়েছি  বিধাতার আয়ু,

তবু কারো ঘুম ভাঙ্গল না

কতটা পথ রাঙা করেছি  চরণের গাঢ় ক্ষরণে, কেউ চমকে ওঠলো না

কত স্বপ্ন পুড়ে পুড়ে ভস্ম বানিয়েছি নাড়ার মত, এতটুকু কারো আঁচ লাগল না


প্রার্থনাকে এতদিন পাপ মনে হতো,

অতৃপ্তির সাথে তারও এখন সহাবস্থান,

বিশ্বাস আজ গলিত বরফে স্নান


নিয়নের আলোয় খুঁজি স্মৃতির পালক,

শূন্যতার বিষ বাষ্প বুঝি নগরীর নিঃশ্বাসে  নিঃশ্বাসে 

আমরণ ফেরি করি নিয়তির শবদাহ,

মৃত্যুর খুনসুটি আর কত?


ঈশ্বর, কিছুই চাই না আমি,

নরক দিতে পারো?



১০. অভিশাপ


১.

ঈশ্বরের কাছে নয়, মৃত্যুর কাছে  চাই করুণা-

অদ্ভুত দুঃখ আমার- কে যেন জাগায় বাঁচার প্রেষণা,

কে যেন নিঃশ্বাসে তোলে মন্দ্রিত বীণার তাল

 মোহময়ী জাদুকরি সুরে করে দিন রাত্রি  উন্মাতাল। 


২.

মৃত্যুর বদলে প্রার্থনায় ছিল অক্ষয় জীবন লাভ,

মৃত্যু ও জীবন না পেলাম কিছুই, নিয়তির কী অভিশাপ! 


Comments

Popular posts from this blog

হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০ গান

হুমায়ূন আহমেদ। ১৩ নভেম্বর ,  ১৯৪৮  –  ১৯ জুলাই ,  ২০১২ গদ্যকার, নাট্যকার , চলচ্চিত্রকার ইত্যাদি নানাবিধ পরিচয়ের বহুল প্রচার তাঁর গীতিকার পরিচয়কে ধামাচাপা দিয়ে রাখছে। হুমায়ূন আহমেদ সত্যিকার অর্থে সর্বদিকেই এক যাদুকরের নাম।  ১৩ নভেম্বর তাঁর জন্মদিন উপলক্ষ্যে আমরা জেনে  নেব  তাঁর লেখা সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০  গানের লিরিক্স। সাথে থাকছে ইউটিউব লিংক!   ১। যদি মন কাঁদে,  তুমি চলে এসো  এক বরষায় এসো ঝর ঝর বৃষ্টিতে, জল ভরা দৃষ্টিতে যদি কোমল শ্যামল ছায়।। যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরী, কদম গুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরী উতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো ঝলকে ঝলকে নাচিবে বিজলি আলো।।  নামিবে আঁধার বেলা ফুরাবার ক্ষণে মেঘমল্লার বৃষ্টির মনে মনে কদমগুচ্ছ খোঁপায় জড়ায়ে দিয়ে জলভরা মাঠে নাচিবো তোমায় নিয়ে।।  ভিডিও লিংক-  https://youtu.be/VBS1yyHTxek?list=PLS1Hg7Qpin0RgzvTf6xai0ZDZcxAtENB6 ২। চাঁদনী পসরে কে আমারে স্মরণ করে কে আইসা দাড়াইসে গো আমার দুয়ারে। তাহারে চিনি না আমি...

জহির রায়হানের জীবন ও কর্মে বাঙালি জাতীয়তাবাদ

   ‘গুরুমশাই, অন্ধকারে কে দেখাবে মানচিত্রখানা? মাথার মধ্যে দৃশ্য নানা, স্মৃতির মধ্যে অজস্র ফুল, তাঁর সুবাসেই দেশকে পাচ্ছি বুকের কাছে’ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী / দেশ দেখাচ্ছে অন্ধকারে স্মৃতিকে স্মরণে রেখে বুকের মধ্যে দেশকে অনুভব করা ও ক্ষণে ক্ষণে কথায়-কর্মে  তার প্রকাশ ঘটাতে পারা মানুষের সংখ্যা খুব কম- হাতে গোনা। জহির রায়হান সে রকম একজন। শুধু বাংলা চলচ্চিত্র নয় সাহিত্য, সাংবাদিকতা ও রাজনীতিতে তিনি দেখেছেন দেয়ালে পিঠ থেকে যাওয়া বাঙালির কাঙ্ক্ষিত  মুক্তির স্বপ্ন।  বাঙালির ঐতিহ্য-চিন্তা-মনন-দুর্দশা-লিপ্সা নিপুণ তুলিতে যেমন এঁকেছেন উপন্যাস ও গল্পের খেরোখাতায়, তেমনি বন্দী করে রেখেছেন তার চলমান ছবি সেলুলয়েডের ফিতায়।  বাঙালির স্বাধীনতার জন্য তিনি দেশান্তর হয়েছিলেন, হন্যে হয়ে বিশাল ভারতের বিশাল জনসমুদ্রে হেঁটে বেড়িয়েছেন, আন্তর্জাতিক সমাবেশে জনমত গড়ে তুলেছেন এবং ঘরে অসুস্থ স্ত্রী ও পরিবারকে অভুক্ত রেখে উপার্জিত অর্থ বিলেয়ে দিয়েছেন ভারতে বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য।  বাংলা চলচ্চিত্রের নান্দনিক স্থপতি হিসেবে বাংলা সংস্কৃতিকে যেমন তিনি দিয়েছেন স...