Skip to main content

জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় কী করনীয়?


 Image result for জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় কী করনীয়?"

জলবায়ু বলতে কোনো স্থানের দীর্ঘ সময়ের, সাধারণত ২০-৩০ বছরের তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা-উষ্ণতার গড়পড়তা হিসাবকে বোঝানো হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের নানা প্রাকৃতিক কারণ রয়েছে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘কন্টিনেন্টাল ড্রিফট’ বা মহাদেশীয় সরণ, আগ্নেয়গিরির উদ্গিরণ, সমুদ্রস্রোত এবং ‘আর্থস টিল্ট বা পৃথিবীর হেলানো অবস্থান। ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। যদিও বাংলাদেশে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন হার ০.১৭ মাত্র, তবু প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বেশি; যেমনউত্তরাঞ্চলে অনাবৃষ্টির কারণে খরা দেখা দেয়। এ অঞ্চলের অনেক জায়গায় অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা এবং কর্মসংস্থানের অভাব থাকায় এমনিতেই মাঝেমধ্যে মঙ্গা হয়। জলবায়ুর পরিবর্তনে এসব এলাকায় যদি খরাপ্রবণতা বাড়ে, তাহলে অবস্থার অবনতি হবে। দক্ষিণাঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে জোয়ারের লবণাক্ত পানি ঢুকে জমির লবণাক্ততা বাড়বে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের যেসব দেশ সবচেয়ে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। দেশটির লাখ লাখ নাগরিক নানা সময়ে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, দাবদাহ ও খরার মতো মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের অনেক অংশ ডুবে যাবে।
বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তন কিছু কিছু অঞ্চলের আবহাওয়ার সংকটময় অবস্থাকে আরও শোচনীয় করে তুলবে এবং উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মোটামুটি ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে আরও বেশি হুমকির মুখে ফেলবে। এ ছাড়া এটা স্পষ্ট যে ঝুঁকিপূর্ণ জলবায়ু সৃষ্টির পেছনে সবচেয়ে বড় কারণগুলোর মধ্যে দারিদ্র্য অন্যতম, তাই আমাদের উচিত দারিদ্র্য কমাতে সাধারণ নীতিমালা তৈরি করা। অর্থনীতিবিদ আলেক্সান্ডার গোলুব ও এলেনা স্ট্রুকোভা গোলুবের নতুন গবেষণা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিয়ে অনুসন্ধান করে, যেগুলো জলবায়ুর পরিবর্তনের স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব মোকাবিলায় সাহায্য করতে পারে। ভবিষ্যতে জলবায়ুর পরিবর্তন বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। উপকূলীয় অঞ্চলগুলো বন্যা ও অন্যান্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে, তাই তাঁরা এসব অঞ্চলের সমস্যার সমাধানের ওপর বেশির জোর দিয়েছেন।

সম্ভাব্য সমাধানঃ

১। ম্যানগ্রোভের সংরক্ষণঃ বাংলাদেশ উপকূলীয় অঞ্চলে ম্যানগ্রোভের সংরক্ষণের পাশাপাশি পুনরায় বৃক্ষ রোপণ করতে পারে, যেটি পরিবেশকে কার্বনমুক্ত করার পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ের বিরুদ্ধে একটি প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবেও কাজ করবে। ম্যানগ্রোভ ক্রমবর্ধমান জীববৈচিত্র্য, মাছের আবাসস্থল ও ইকোট্যুরিজম সুবিধাসহ কিছু অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করে। কিন্তু এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল, কারণ এই ব্যবস্থায় প্রতিবছর প্রায় ৪০ কিলোমিটার উপকূলরেখায় ম্যানগ্রোভ রোপণ করতে হবে। সুন্দরবনের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবস্থিত ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণে পরবর্তী ৩০ বছরে প্রয়োজন হবে ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকারও বেশি। সব মিলিয়ে জলবায়ু সুরক্ষা ও পর্যটনের উন্নয়নের পাশাপাশি ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ এবং পুনর্বনায়নের পেছনে ব্যয়িত প্রতি টাকায় ২ দশমিক ৮ টাকার কল্যাণ সাধিত হবে।

২। আগাম সতর্কতা ব্যবস্থাঃ আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে যাতে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে যেখানে মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। অনেকে বর্তমান আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ব্যবহার করে না, কারণ সেখানে তারা তাদের গবাদিপশু ও অন্যান্য মূল্যবান প্রাণিসম্পদ রাখার ব্যবস্থা করতে পারে না, তাই প্রস্তাবিত কাঠামো মানুষ এবং গবাদিপশু উভয়ের বাসস্থানের ব্যবস্থা করবে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ৫৩০টি আশ্রয়কেন্দ্রের প্রয়োজন, কিন্তু প্রতিটি ঘূর্ণিঝড় বিবেচনায় নিলে এগুলো বেশ ব্যয়বহুল হিসেবে দেখানো হয়েছে, যেখানে সবচেয়ে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়গুলো কালেভদ্রে ঘটে। প্রতিটি বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্রের পেছনে খরচ হবে প্রায় ৮ দশমিক ৫ কোটি টাকা এবং ব্যয়িত প্রতি টাকা ১ দশমিক ৮ টাকার কল্যাণ সাধন করবে।

৩। অবকাঠামো নির্মাণঃ তৃতীয় সম্ভাব্য সমাধানটি হলো নিচু জমির চারপাশে বাঁধ দেওয়া, যা বন্যা থেকে কৃষিজমি, বাড়িঘর ও অবকাঠামোকে রক্ষা করবে। তবে এর উপকারিতাগুলো সুনির্দিষ্টভাবে বন্যার ধরনের ওপর নির্ভর করে। বন্যার পানি যদি ৩ মিটারের বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হয়, কিছু এলাকায় যা নিয়মিতভাবে ঘটে থাকে, তাহলে জমির বাঁধগুলোতে প্রায়ই ফাটল ধরে যায় এবং এটি কোনো উপকারেই আসে না। এগুলোও অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও এগুলো করতে বাংলাদেশের খরচ হবে ৩৭ হাজার ২০০ কোটি টাকারও বেশি। বন্যার পানি যেখানে ৩ মিটারের বেশি উচ্চতা ছাড়িয়ে যায়, সেখানে বাঁধ নির্মাণের খরচ প্রাপ্ত সুবিধার চেয়ে বেশি হবে। একটি উত্তম প্রস্তাব হলো, এমন এলাকাগুলোর দিকে নজর দেওয়া বন্যার পানি ৩ মিটারের চেয়ে কম উচ্চতায় প্রবাহিত হয়, তারপরেও যা মৃত্যু ও ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। এসব ক্ষেত্রে ব্যয়িত প্রতি টাকায় ১ দশমিক ৮ টাকার সুবিধা পাওয়া যাবে।

এছাড়া উষ্ণতা হ্রাসে বৈশ্বিকভাবে যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে তা হল-
১। ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট জনপ্রিয় করতে হবে।
২। অনবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার হ্রাস করে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।
৩। প্রতিটি জিনিস পুনর্ব্যবহারের চেষ্টা করা।
৪। উন্নত বিশ্বকে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর পাশে দাঁড়াতে হবে। জলবায়ু খাতে তাদের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
৫। সচেতনতা তৈরি করা।
৬। বনাঞ্চল ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
৭। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক ও পরিবেশসম্মত পদ্ধতি গ্রহণ করা।



                             

Comments

Popular posts from this blog

হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০ গান

হুমায়ূন আহমেদ। ১৩ নভেম্বর ,  ১৯৪৮  –  ১৯ জুলাই ,  ২০১২ গদ্যকার, নাট্যকার , চলচ্চিত্রকার ইত্যাদি নানাবিধ পরিচয়ের বহুল প্রচার তাঁর গীতিকার পরিচয়কে ধামাচাপা দিয়ে রাখছে। হুমায়ূন আহমেদ সত্যিকার অর্থে সর্বদিকেই এক যাদুকরের নাম।  ১৩ নভেম্বর তাঁর জন্মদিন উপলক্ষ্যে আমরা জেনে  নেব  তাঁর লেখা সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০  গানের লিরিক্স। সাথে থাকছে ইউটিউব লিংক!   ১। যদি মন কাঁদে,  তুমি চলে এসো  এক বরষায় এসো ঝর ঝর বৃষ্টিতে, জল ভরা দৃষ্টিতে যদি কোমল শ্যামল ছায়।। যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরী, কদম গুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরী উতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো ঝলকে ঝলকে নাচিবে বিজলি আলো।।  নামিবে আঁধার বেলা ফুরাবার ক্ষণে মেঘমল্লার বৃষ্টির মনে মনে কদমগুচ্ছ খোঁপায় জড়ায়ে দিয়ে জলভরা মাঠে নাচিবো তোমায় নিয়ে।।  ভিডিও লিংক-  https://youtu.be/VBS1yyHTxek?list=PLS1Hg7Qpin0RgzvTf6xai0ZDZcxAtENB6 ২। চাঁদনী পসরে কে আমারে স্মরণ করে কে আইসা দাড়াইসে গো আমার দুয়ারে। তাহারে চিনি না আমি...

জহির রায়হানের জীবন ও কর্মে বাঙালি জাতীয়তাবাদ

   ‘গুরুমশাই, অন্ধকারে কে দেখাবে মানচিত্রখানা? মাথার মধ্যে দৃশ্য নানা, স্মৃতির মধ্যে অজস্র ফুল, তাঁর সুবাসেই দেশকে পাচ্ছি বুকের কাছে’ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী / দেশ দেখাচ্ছে অন্ধকারে স্মৃতিকে স্মরণে রেখে বুকের মধ্যে দেশকে অনুভব করা ও ক্ষণে ক্ষণে কথায়-কর্মে  তার প্রকাশ ঘটাতে পারা মানুষের সংখ্যা খুব কম- হাতে গোনা। জহির রায়হান সে রকম একজন। শুধু বাংলা চলচ্চিত্র নয় সাহিত্য, সাংবাদিকতা ও রাজনীতিতে তিনি দেখেছেন দেয়ালে পিঠ থেকে যাওয়া বাঙালির কাঙ্ক্ষিত  মুক্তির স্বপ্ন।  বাঙালির ঐতিহ্য-চিন্তা-মনন-দুর্দশা-লিপ্সা নিপুণ তুলিতে যেমন এঁকেছেন উপন্যাস ও গল্পের খেরোখাতায়, তেমনি বন্দী করে রেখেছেন তার চলমান ছবি সেলুলয়েডের ফিতায়।  বাঙালির স্বাধীনতার জন্য তিনি দেশান্তর হয়েছিলেন, হন্যে হয়ে বিশাল ভারতের বিশাল জনসমুদ্রে হেঁটে বেড়িয়েছেন, আন্তর্জাতিক সমাবেশে জনমত গড়ে তুলেছেন এবং ঘরে অসুস্থ স্ত্রী ও পরিবারকে অভুক্ত রেখে উপার্জিত অর্থ বিলেয়ে দিয়েছেন ভারতে বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য।  বাংলা চলচ্চিত্রের নান্দনিক স্থপতি হিসেবে বাংলা সংস্কৃতিকে যেমন তিনি দিয়েছেন স...

কামরুল কাইসের ১০ কবিতা

১. মহামারি  স্থির সময় অথির বেগে দ্যাখায় যেন অসময়ের ফল। ২. মিতালি ওসব কথা থাক- একটু নিবিড় চঞ্চু তোমার নদীর যেন বাঁক। দৃশ্যে মাখো কালি‌ - তীরে বসে দেখছি নদী দিচ্ছি শিস আর তালি। দন্তসমেত হাঙর ছোটে করাল স্রোতে তোর আমি ডাকি শান্ত দোয়েল  তাতেই নষ্ট ভোর! আজকে এসব রাখ- অল্প কথার কথকতা দূর মিলিয়ে যাক। ৩. প্রাপ্তি মেঘের কান্না দেখব বলে আকাশে তাকিয়েছিলাম নেই, নেই কান্না শুধু এ মনেই। ঊষরতা পাবো বলে মরুভূমি চেয়েছিলাম নেই, নেই ফুল ফোটা সবখানেই। কাকে ছোঁব বলে যেন হাত বাড়িয়ে ছিলাম নেই, নেই রয়ে গেছে সে চির ভাবনাতেই। ৪. স্বাধীনতার সনেট ভেসে ছিল দেশ যবে শোণিত ধারায়, আর্তের ক্রন্দনে ছিল স্পর্শ বেদনার। পাখির সুরেলা কণ্ঠ বন্ধ ছিল হায়! হৃদয়-রক্ত ক্ষরণে বাংলা নিঃসাড়, রবির কিরণ নেই ঊষা-নীলিমায়, আকাশে ভাসল ধোঁয়া বারুদ বোমার পান্থ শ্রান্তি সারল না অশ্বত্থ ছায়ায়- অপরাহ্ণে নেমে এল নিকষ আঁধার! মাঠের সবুজতায় রক্তিম পরশ স্বাধীন প্রাণ স্পন্দন এলো অবশেষে- কণ্ঠে জাগাল সংগীত সপ্তসুর এসে! চেতনার রন্ধ্রে পূর্ণ গভীর হরষ উচ্ছসি হল উদ্ভাস। আজো বহমান। স্বাধীন-তটিনী-ধারা, হবে না প্রয়াণ। ৫. অপহৃত আকাশ যদি না কখনো গোধূ...