Skip to main content

কুমিল্লা বিমানবন্দরঃ প্রত্নতত্ত্ব না সমূহ সম্ভাবনা?


 সবধরনের সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও গত দুই যুগ ধরে বন্ধ রয়েছে কুমিল্লা বিমানবন্দর ৷ অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চালু হওয়া বন্দরটি ব্যবহার হয়েছে বহুবছর ৷

কুমিল্লা নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় থেকে অল্প দূরত্বে ইপিজেডের পাশেই ৭৭ একর ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা বিমানবন্দর। দীর্ঘ ৪০ বছর উড়োজাহাজ ওঠা নামা না করলেও এটি কুমিল্লা বিমানবন্দর নামেই এ অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ে স্থান নিয়ে আছে। আবার আক্ষেপও বাসা বেঁধে আছে কেন এটি পুনরায় চালু হচ্ছে না। অথচ প্রয়োজনীয় লোকবল, নেভিগেশন ফ্যাসিলিটিস, কন্ট্রোল টাওয়ার, ভিএইচএফ সেট, এয়ার কমিউনিকেশন যন্ত্রপাতি, ফায়ার স্টেশন, ফায়ার সার্ভিস, যাত্রীকক্ষ, যানবাহনসহ সব সুযোগ রয়েছে। কেবল পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেই। কুমিল্লা বিমানবন্দরে কবে ওড়বে উড়োজাহাজ- এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে কুমিল্লাবাসীর মনে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) উদ্বোধনের সময় ঘোষণা দিয়েছিলেন কুমিল্লার এ বিমানবন্দরেই শর্টটেক অব ল্যান্ডিং বা স্টল বিমান সার্ভিস চালু করা হবে। কিন্তু ২৫ বছরেও সেই ঘোষণা বাস্তবায়িত হয়নি। তবে বৃহত্তর কুমিল্লার মানুষ এখনো আশায় বুক বেঁধে আছে প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই পুনরায় চালু হবে কুমিল্লা বিমানবন্দর।
কুমিল্লায় বিমানবন্দর ১৯৪০ সালে স্থাপন করা হয়েছিল। ১৯৫০ সাল থেকে শুরু করে অনুমান ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত এই বিমানবন্দর হতে তেজগাঁও পুরান বিমান বন্দরে অভ্যন্তরীণ উড়োজাহাজ চলাচল করতো। পরবর্তীতে ঢাকায় জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) স্থাপন এবং ১৯৮০ সালে এটির কার্যক্রম শুরু হলে কুমিল্লা বিমানবন্দরের কার্যক্রম অজ্ঞাত কারণেই বন্ধ হয়ে পড়ে। বর্তমানে কুমিল্লা বিমানবন্দর শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোর নেভিগেশন সহায়তার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ সিগনালিং কাজের মধ্য দিয়ে কুমিল্লা বিমানবন্দর থেকে আয় আসে প্রতিমাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকা।
কুমিল্লা বিমানবন্দর সুত্রে জানা যায়, কুমিল্লা বিমানবন্দর এখনো চালু অবস্থাতেই আছে। কেবল উড়োজাহাজ উঠা-নামা করে না। এখানে সর্বাধুনিক বিমান পথনির্দেশক (ভিউআর) এবং বিমানের দূরত্বমাপক ডিএনই স্থাপন করা হয়েছে। এখানে প্রয়োজনীয় কর্মকর্তা, কর্মচারিও রয়েছেন। এই বিমানবন্দরে ৬ হাজার ফুট রানওয়ে রয়েছে। এরমধ্যে ২ হাজার ১শ’ ফুট রানওয়ে ব্যবহার উপযোগী। বাকিটুকু সংস্কার করে অন্যান্য উদ্যোগ নিলেই কুমিল্লা বিমানবন্দর পুনরায় চালু করা অসম্ভব কোন বিষয় নয়। তবে, বিমানবন্দরের একজন কর্মচারী সেখানে অবস্থানরত সেনাবাহিনী বিমানবন্দরের আন্ডারগ্রাউন্ডের কাজে বাধা প্রদান করে বলে অভিযোগ করেন। বিমান সূত্র জানায়- কুমিল্লা ইপিজেড কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দর চালু দেখতে চায়, কারণ অনেক বিনিয়োগকারী বিমানবন্দরের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ জেলা কুমিল্লা। শিল্প সংস্কৃতি ও ব্যবসা বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র এই জেলা। প্রতি মাসে কুমিল্লা থেকে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের মাধ্যমে বিদেশ গমন করছে ৫ হাজারের বেশি শ্রমিক। এভাবে বিদেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশের মোট জনশক্তি রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রেরণে শীর্ষে রয়েছে কুমিল্লা। কুমিল্লা জেলাসহ নিকটবর্তী চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, ফেনীর বিপুল সংখ্যক প্রবাসী ও ব্যবসায়ি রয়েছেন। তাদের যাতায়াত সুবিধা বিবেচনা করে কুমিল্লায় বিমানবন্দর চালু হওয়া উচিত বলে অনেকে মনে করছেন।

এছাড়াও কুমিল্লা দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা। দেশি বিদেশি অসংখ্য পর্যটক বছর জুড়েই কুমিল্লায় ভ্রমণে আসে। বিমানবন্দর চালু থাকলে পর্যটকদের পরিবহন সুবিধা বেড়ে যেতো। কুমিল্লা বিমানবন্দরের পাশেই রয়েছে ইপিজেড। আর কুমিল্লাসহ নিকটবর্তী কয়েকটি জেলায় রয়েছে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা। এসব শিল্প কলকারখানার আমদানি রপ্তানির সুবিধাগত কারণগুলোও এখানে বিমানবন্দর চালুর দাবি রাখে।
আর কুমিল্লা বিমান বন্দর চালু হলে কুমিল্লার ঐশ্বর্য বেড়ে যাবে। সিটি কপোরেশনের গুরুত্বও বেড়ে যাবে এবং কুমিল্লা ইপিজেডে নতুন নতুন বিদেশি কোম্পানি বিনিয়োগ করতে আশ্বস্থ হবে। সব মিলিয়ে, কুমিল্লা বিমানবন্দর পুনরায় চালু হলে অর্থনীতির চাকা আরও বেগবান হওয়া সহ সার্বিক ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হবে মনে করছেন ব্যবসায়ি নেতৃবৃন্দ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ।

Comments

Popular posts from this blog

হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০ গান

হুমায়ূন আহমেদ। ১৩ নভেম্বর ,  ১৯৪৮  –  ১৯ জুলাই ,  ২০১২ গদ্যকার, নাট্যকার , চলচ্চিত্রকার ইত্যাদি নানাবিধ পরিচয়ের বহুল প্রচার তাঁর গীতিকার পরিচয়কে ধামাচাপা দিয়ে রাখছে। হুমায়ূন আহমেদ সত্যিকার অর্থে সর্বদিকেই এক যাদুকরের নাম।  ১৩ নভেম্বর তাঁর জন্মদিন উপলক্ষ্যে আমরা জেনে  নেব  তাঁর লেখা সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০  গানের লিরিক্স। সাথে থাকছে ইউটিউব লিংক!   ১। যদি মন কাঁদে,  তুমি চলে এসো  এক বরষায় এসো ঝর ঝর বৃষ্টিতে, জল ভরা দৃষ্টিতে যদি কোমল শ্যামল ছায়।। যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরী, কদম গুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরী উতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো ঝলকে ঝলকে নাচিবে বিজলি আলো।।  নামিবে আঁধার বেলা ফুরাবার ক্ষণে মেঘমল্লার বৃষ্টির মনে মনে কদমগুচ্ছ খোঁপায় জড়ায়ে দিয়ে জলভরা মাঠে নাচিবো তোমায় নিয়ে।।  ভিডিও লিংক-  https://youtu.be/VBS1yyHTxek?list=PLS1Hg7Qpin0RgzvTf6xai0ZDZcxAtENB6 ২। চাঁদনী পসরে কে আমারে স্মরণ করে কে আইসা দাড়াইসে গো আমার দুয়ারে। তাহারে চিনি না আমি...

জহির রায়হানের জীবন ও কর্মে বাঙালি জাতীয়তাবাদ

   ‘গুরুমশাই, অন্ধকারে কে দেখাবে মানচিত্রখানা? মাথার মধ্যে দৃশ্য নানা, স্মৃতির মধ্যে অজস্র ফুল, তাঁর সুবাসেই দেশকে পাচ্ছি বুকের কাছে’ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী / দেশ দেখাচ্ছে অন্ধকারে স্মৃতিকে স্মরণে রেখে বুকের মধ্যে দেশকে অনুভব করা ও ক্ষণে ক্ষণে কথায়-কর্মে  তার প্রকাশ ঘটাতে পারা মানুষের সংখ্যা খুব কম- হাতে গোনা। জহির রায়হান সে রকম একজন। শুধু বাংলা চলচ্চিত্র নয় সাহিত্য, সাংবাদিকতা ও রাজনীতিতে তিনি দেখেছেন দেয়ালে পিঠ থেকে যাওয়া বাঙালির কাঙ্ক্ষিত  মুক্তির স্বপ্ন।  বাঙালির ঐতিহ্য-চিন্তা-মনন-দুর্দশা-লিপ্সা নিপুণ তুলিতে যেমন এঁকেছেন উপন্যাস ও গল্পের খেরোখাতায়, তেমনি বন্দী করে রেখেছেন তার চলমান ছবি সেলুলয়েডের ফিতায়।  বাঙালির স্বাধীনতার জন্য তিনি দেশান্তর হয়েছিলেন, হন্যে হয়ে বিশাল ভারতের বিশাল জনসমুদ্রে হেঁটে বেড়িয়েছেন, আন্তর্জাতিক সমাবেশে জনমত গড়ে তুলেছেন এবং ঘরে অসুস্থ স্ত্রী ও পরিবারকে অভুক্ত রেখে উপার্জিত অর্থ বিলেয়ে দিয়েছেন ভারতে বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য।  বাংলা চলচ্চিত্রের নান্দনিক স্থপতি হিসেবে বাংলা সংস্কৃতিকে যেমন তিনি দিয়েছেন স...

কামরুল কাইসের ১০ কবিতা

১. মহামারি  স্থির সময় অথির বেগে দ্যাখায় যেন অসময়ের ফল। ২. মিতালি ওসব কথা থাক- একটু নিবিড় চঞ্চু তোমার নদীর যেন বাঁক। দৃশ্যে মাখো কালি‌ - তীরে বসে দেখছি নদী দিচ্ছি শিস আর তালি। দন্তসমেত হাঙর ছোটে করাল স্রোতে তোর আমি ডাকি শান্ত দোয়েল  তাতেই নষ্ট ভোর! আজকে এসব রাখ- অল্প কথার কথকতা দূর মিলিয়ে যাক। ৩. প্রাপ্তি মেঘের কান্না দেখব বলে আকাশে তাকিয়েছিলাম নেই, নেই কান্না শুধু এ মনেই। ঊষরতা পাবো বলে মরুভূমি চেয়েছিলাম নেই, নেই ফুল ফোটা সবখানেই। কাকে ছোঁব বলে যেন হাত বাড়িয়ে ছিলাম নেই, নেই রয়ে গেছে সে চির ভাবনাতেই। ৪. স্বাধীনতার সনেট ভেসে ছিল দেশ যবে শোণিত ধারায়, আর্তের ক্রন্দনে ছিল স্পর্শ বেদনার। পাখির সুরেলা কণ্ঠ বন্ধ ছিল হায়! হৃদয়-রক্ত ক্ষরণে বাংলা নিঃসাড়, রবির কিরণ নেই ঊষা-নীলিমায়, আকাশে ভাসল ধোঁয়া বারুদ বোমার পান্থ শ্রান্তি সারল না অশ্বত্থ ছায়ায়- অপরাহ্ণে নেমে এল নিকষ আঁধার! মাঠের সবুজতায় রক্তিম পরশ স্বাধীন প্রাণ স্পন্দন এলো অবশেষে- কণ্ঠে জাগাল সংগীত সপ্তসুর এসে! চেতনার রন্ধ্রে পূর্ণ গভীর হরষ উচ্ছসি হল উদ্ভাস। আজো বহমান। স্বাধীন-তটিনী-ধারা, হবে না প্রয়াণ। ৫. অপহৃত আকাশ যদি না কখনো গোধূ...