Skip to main content

প্রিয় ২০টি সিনেমা

প্রথমেই বলে রাখি, যে কোন কিছু সেরা বা প্রিয় হওয়া ব্যক্তি নিরপেক্ষ।  সময়ের সঙ্গে তার বদল ঘটতেও পারে। তবু  এ মুহূর্তে আমার দেখা অসংখ্য সিনেমার মধ্যে কিছু সিনেমা অনেকের ভাল লাগবে বলেই আমার বিশ্বাস।  

সেই ১৮৯৫ সালে প্রথম বাণিজ্যিক সিনেমার পরে বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত কম হলেও ২৫ লক্ষ সিনেমা তৈরি হয়েছে! খুব স্বাভাবিকভাবে একজন মানুষ সারা জীবনে এর সিকিভাগ সিনেমাও দেখে শেষ করতে পারবে না। বই ও সংগীতের পরে আমার কাছে বিনোদন ও শিক্ষার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম মনে হয় সিনেমাকে। বেছে বেছে সিনেমা দেখলেও সব ছবি হৃদয় ও মগজে একসাথে দাগ কাটে না। কিছু ছবির গল্প অনুপ্রেরণার মাধ্যমে স্বপ্নকে তাড়িয়ে তোলে। কিছু ছবির সিনেমাটোগ্রাফি এত দৃষ্টিনন্দন যে চোখের রেটিনায় লেপ্টে থাকে দীর্ঘদিন। কখনো সংলাপ, কখনো অভিনয় কিংবা সব মিলিয়ে একটি ছবি হয়ে ওঠে অনন্য ও দর্শকপ্রিয়।

করোনাকালের এই অবসরে বসে বসে আমার দেখা সেরা ২০ টি সিনেমার একটি তালিকা তৈরি ফেললাম।
১। ফরেস্ট গাম্প (১৯৯১)


ফরেস্ট গাম্প এক বোকা লোকের সহজ সরলভাবে বেঁচে থাকার গল্প। ফরেস্ট গাম্প কীভাবে ঘটনাক্রমে তার জীবনকে আমেরিকার ইতিহাসের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে ফেলে, তারই বর্ণনা ছিল গাম্পের কণ্ঠে । কোন রকম চেষ্টা ছাড়াই সে ফুটবল তারকা হয়ে যায়, জন এফ কেনেডির সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করার সুযোগ পায়, ভিয়েতনাম যুদ্ধে দেশের হয়ে যোগ দেয়, লাভজনক চিংড়ি ব্যবসায় জড়িয়ে পরে, বছরের পর বছর ধরে গ্রামান্তর দৌঁড়ে অংশ নেয়। শুধু তাই নয়, ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারিও সে উন্মোচন করে। নিজের সরল ব্যক্তিত্ব ও সাদামাটা জীবনে ফরেস্ট গাম্প সব সময়ই ছোট্ট বেলার বান্ধবী জেনীকে কাছে চেয়েছিলো। কিন্তু নিরীহ ও সরল ফরেস্ট গাম্প আমেরিকার সবচেয়ে বড় বড় ঘটনার সাক্ষী হয়ে ওঠে। তবুও শেষ পর্যন্ত সে সাধারণই থেকে যায়। টম হ্যাঙ্কস এর অসংখ্য অসাধারণ মুভির মধ্যে ফরেস্ট গাম্প অন্যতম সেরা মুভি।


২। কাস্ট এওয়ে (২০০০)


এক ভ্যাগ্যাহত ব্যক্তি চাক নোল্যান্ড (টম হ্যাঙ্কস) বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আটকে পড়েন প্রশান্ত মহাসাগরের কোন এক বাস-অযোগ্য দ্বীপে। পেশায় তিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার। কাজ করেন ফেডারেল এক্সপ্রেস নামের এক কুরিয়ার সার্ভিসে। প্রচন্ড সময়সচেতন চাক ঘুরে বেড়ান সারা পৃথিবীতে। সমাধান করেন বিভিন্ন সমস্যার। প্রেমিকা কেলির সাথে বিয়ে হচ্ছে না এই সময়ের অভাবেই। খুব সাধারণ মানুষ চাক। তার দাঁতের ব্যাথা আছে। দেখতে পথচলতি আর দশটা মানুষের মত। একটু মোটা। ভয় পান ডেন্টিস্টের কাছে যেতে। সেই চাকই ভাগ্যের বরাতে আটকে যায় সমুদ্রবেষ্টিত এক দ্বীপে। সেখানে কাটানো চাকের চার বছর আর ফিরে আসাটাই এ সিনেমার গল্প। এ ছবি প্রচন্ড বৈরী পরিবেশেও মানসিক শক্তি না হারাতে আপনাকে উৎসাহ দেবে।
৩। দ্য রেভেন্যান্ট (২০০০)



পশুচামড়া সংগ্রহকারী দলের সদস্য হিউ গ্লাস কীভাবে প্রথমে রেড ইন্ডিয়ান উপজাতি, তারপর ভাল্লুক, তারপর দলের অন্য সদস্য জন ফিত্জরাল্ড, তারপর ফরাসি পাচারকারী, তারপর আবার রেড ইন্ডিয়ান উপজাতিদের আক্রমণ সামলে কই মাছের জান নিয়ে নিজের সতীর্থদের কাছে ফিরে আসে এবং ফিত্জেরাল্ডের হাতে নিজের সন্তানের হত্যার প্রতিশোধ নিতে যায়- তা নিয়েই ‘দ্য রেভেন্যান্ট’-এর গল্প। লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও সম্ভবত তার জীবনের সেরা অভিনয় করেছেন এই মুভিতে।
৪। আগন্তুক (১৯৯১)


ভ্রমণ পাগল মানুষ মনোমোহন মিত্র নিজ দেশ ভারত ছেড়েছেন প্রায় ৩৫ বছর। পশ্চিমের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের পাট চুকিয়ে এবারে ফিরবেন পূর্বে। তারই বিরতিতে দিল্লি এসে হঠাৎ কলকাতায় থাকা একমাত্র রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ভাগ্নি অনীলা ও তার পরিবারকে দেখার ইচ্ছে পোষণ করে একটা চিঠি দিয়ে বসেন। ১৯৫৫-এর দিকে মনোমোহন যখন দেশ ছাড়েন অনীলা তখন কেবল দুই বছরের খুকি। রক্তের সম্পর্কের কোনো আত্মীয়ই এখন আর বেঁচে নেই দেখে অনীলার হাতে উপায় নেই বেড়াতে আসতে চাওয়া মামাটি তার জাল নাকি সত্যিকারের মামা তা বের করার। ছবির গল্পটা এখান থেকেই শুরু। বলছিলাম ১৯৯১ সালে ভারতবর্ষে মুক্তিপ্রাপ্ত সত্যজিৎ রায়ের ক্যারিয়ারের সর্বশেষ ছবি ‘আগন্তুকের’ কথা। সংলাপনির্ভর এই নাট্য চলচ্চিত্রটিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন উৎপল দত্ত। ইন্দো-ফ্রেঞ্চ যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবিটি ১৯৯২ সালে ভারতের সেরা ছবি ও সেরা পরিচালনার জাতীয় পুরস্কার জেতে।
আমার দেখা বাংলা সিনেমার সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান চরিত্র এ সিনেমার মূল চরিত্র মনোমোহন মিত্র।
৫। পথের পাঁচালী (১৯৫৫)


গ্রাম বাংলায় বেড়ে উঠা দুই ভাইবোন অপু আর দুর্গার কাহিনী আম আঁটির ভেঁপু উপন্যাস, যা পরে নামকরণ হয় পথের পাঁচালী (১৯২৯)। এ উপন্যাস অবলম্বনে বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় পথের পাঁচালী (চলচ্চিত্র) নির্মাণ করেন যা আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করে। এই চলচ্চিত্রটি দেশী-বিদেশী প্রচুর পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছিল। কান ফিল্ম ফেস্টিভালে ‘দি বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্টস অব দি ইয়ার’ পুরস্কারে ভূষিত বাঙালিদের কাছে পথের পাঁচালী বাঙালি জীবনের একটি অনবদ্য চিত্র হিসেবেই বিবেচিত হয়। অর্ধশত বছর আগে নির্মিত সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী আমার অন্যতম প্রিয় ছবি এবং এখনো সুযোগ পেলে ছবিটি আমি উপভোগ করি; সেই সঙ্গে পরবর্তী দুটি—অপরাজিত, অপুর সংসারসহ আমার প্রিয় ছবির তালিকায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
৬। হীরক রাজার দেশে (১৯৮০)


রুপকের আশ্রয় নিয়ে এ ছবিতে দেখানো হয় কীভাবে রাজা বা শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা আকড়ে ধরে রাখে। এর একটি বিশেষ দিক হচ্ছে মূল শিল্পীদের সকল সংলাপ ছড়ার আকারে করা হয়েছে। তবে কেবল একটি চরিত্র ছড়ার ভাষায় কথা বলেননি। তিনি হলেন শিক্ষক। এ দ্বারা বোঝানো হয়েছে একমাত্র শিক্ষক মুক্ত চিন্তার অধিকারী, বাদবাকি সবার চিন্তাই নির্দিষ্ট পরিসরে আবদ্ধ। এ ছবির অনেক সংলাপ শ্লোগানের মতো হয় গেছে। যেমন- যায় যদি যাক প্রাণ, হীরক রাজা ভগবান। দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান।
৭। জাতিস্মর (২০১৪)


এই চলচ্চিত্রটি অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি (হেন্সম্যান ফিরিঙ্গি) নামের উনিশ শতকের একজন পর্তুগিজ কবিয়ালের ওপর নির্মিত। এতে উনিশ শতক ও বর্তমান সময়ের বাঙালি সংস্কৃতির অপূর্ব মেলবন্ধন দেখানো হয়েছে। প্রসেনজিতের দুর্দান্ত অভিনয়ে আপনি মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না।
৮। দ্য গোল্ড রাশ (১৯২৫)


বিগ জিম ক্লন্ডিক গোল্ড রাশকালীন সময়ে একজন স্বর্ণ অনুসন্ধানী, যে প্রবল তুষার ঝড়ের পর তার বসত ভূমিতে বিশাল স্বর্ণের মজুদ খুঁজে পায়। একই তুষার ঝরে নিঃসঙ্গ অনুসন্ধানীও স্বর্ণ খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে যায়। সে এক ফেরারী ব্ল্যাক লারসেনের কুঁড়েঘরে প্রবেশ করে। লারসেন তাকে বাইরে বের করে দিতে চায়। সেই সময় বিগ জিমও সেই ঘরে প্রবেশ করে। লারসেন তাদের দুজনকেই তার বন্দুক দিয়ে ভয় দেখাতে চায়, কিন্তু জিমের সাথে কুলিয়ে ওঠতে পারে না, এবং তারা তিনজনই এই ঘরে একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। সম্পদের মোহ মানুষকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে, তার নান্দনিক স্বাক্ষর চার্লি চ্যাপলিনের হাস্য রসাত্মক এ ছবি।
৯। মডার্ন টাইমস (১৯৩৬)


শিল্প বিপ্লব পরবর্তী মানুষের জীবন কতটা যান্ত্রিক ও নির্মম হতে পারে তা স্যাটায়ারের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে এ ছবিতে। ছবিতে মহামন্দা চলাকালীন বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান ও আর্থিক অবস্থার জন্য হতাশার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যাকে চ্যাপলিন আধুনিক শিল্পায়নের সামর্থ্যের জন্য বলে বিবেচনা করেন।
১০। জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০)


জীবন থেকে নেয়ার গল্প এক পরিবারকে নিয়ে। খান আতাউর রহমান পেশায় একজন আইনজীবী। বাইরে জাঁদরেল উকিল হলেও, ঘরে বৌয়ের কাছে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে থাকতে হয় তাকে। শুধু তিনি নন, পরিবারের সবাইকে কঠোর হস্তে শাসন করেন রওশন জামিল। এই সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের আবডালে জহির রায়হান তুলে ধরেন তৎকালীন রাজনৈতিক আন্দোলন, সামরিক শাসন তথা একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ আর বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান।
১১। মাটির ময়না (২০০২)


ষাটের দশকের উত্তাল সময়ের প্রেক্ষাপট হতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঠিক আগের সময়ের একটি পরিবার কিভাবে যুদ্ধ ও ধর্মের কারণে ভেঙে চুরমার হয়ে যায় তার গল্প নিয়ে তৈরি এ চলচ্চিত্র। পরিচালক তারেক মাসুদের নিজের ছোটবেলার কাহিনীর জীবনের উপর ভিত্তি করে এ ছবির কাহিনী গড়ে উঠেছে। অত্যন্ত ধার্মিক বাবা কাজী সাহেব তার ছোট্ট ছেলে আনুকে পড়াশোনার জন্য মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দেন। দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের পাশাপাশি আনুর মাদ্রাসাতেও চরম ও মধ্যপন্থী মতবাদের বিকাশ ঘটতে থাকে। বিভক্তির এই একই চিত্র দেখা যায় গোঁড়া ধার্মিক কাজী ও তার স্বাধীনচেতা স্ত্রী আয়েশার মধ্যে । ধর্মীয় উদারতা, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র এবং ইসলামের দুর্বোধ্যতা এ সব কিছু মিলিয়ে মাটির ময়না জাগতিক দ্বন্দ্বের একটি দৃশ্যমান প্রতিকৃতি। মজার ব্যাপার হল, পুরো চলচ্চিত্র জুড়ে ঐতিহাসিক ঘটনার উদ্ধৃতি থাকলেও সেগুলো একটি কিশোরের মানবিক অভিজ্ঞতায় প্রকাশিত হয়েছে।
১২। মনের মানুষ (২০১০)


পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর পূর্ববঙ্গে জমিদারী করতে এসে দেখা পান লালনের। পদ্মা নদীর বজরায় বসে জ্যোতিরিন্দ্র লালনের একটি স্কেচ তৈরি করেন। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ হলেন শহুরে বুদ্ধিজীবী, তিনি লালনের সাথে বাউলের দর্শন নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনার মাধ্যমেই লালনের জীবন চলচ্চিত্রের দর্শকদের সামনে উপস্থাপিত হয়। কাহিনীর উপস্থাপনাটি লালন ফকিরের জীবন ও সময় এবং তার উদারপন্থী শিষ্যদের, যারা ১৯শ শতাব্দীর ভারতীয় সমাজের কুসংস্কারাচ্ছন্ন থেকে উচ্চভাবে জীবনযাপন করেছিলেন। আমার দেখা বেস্ট বায়োপিক মুভি গৌতম ঘোষের এই 'মনের মানুষ'।
১৩। শঙ্খচিল (২০১৬)


বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের এক জনপদের গল্প ‘শঙ্খচিল’। যেখানে এক ভূগোল শিক্ষক, তার স্ত্রী ও ছোট মেয়েকে কেন্দ্র করেই এগিয়ে যাবে ছবিটি। প্রকাশিত পোস্টারে দেখা যায়- অল্প গাছ-গাছালি ঘেরা একটি বনের ভেতর দিয়ে হাঁটছে এক যুবক। তার পরনে সাদা শার্টের সঙ্গে কালো প্যান্ট। যুবকের কাঁধে অজ্ঞান অবস্থায় রয়েছে একটি যুবতী। ১৯৪৭ সালের দেশভাগ এবং পরবর্তী সময়ে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখের গল্প নিয়েই মূলত কাহিনী তৈরি হয়েছে গৌতম ঘোষের অন্যতম মাস্টারপিস এই চলচ্চিত্রের।
১৪। মাই নেম ইজ খান (২০১০)


নাইন ইলেভেন ঘটনার পর থেকে বিশ্বজুড়ে ইসলামবিদ্বেষ বাড়তে থাকে। মাইল্ড লেভেলের অটিস্টিক এক মুসলিম তরুণ তার ধার্মিক সত্তার কারণে নানা বাধার সম্মুখীন হয়। সবাই তাকে সন্দেহের চোখে দেখে। ঘটনাক্রমে দেখা যায় সেই হয়ে ওঠে এক বিশাল ব্যক্তিত্ব। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে এই ছবি প্রতিবাদের স্বাক্ষর।
১৫। গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮)


গাঁয়ের প্রভাবশালী ব্যক্তি মণ্ডল। তাঁর ছেলে মিলন পছন্দ করে দরিদ্র গায়েনের মেয়ে গোলাপীকে। একদিন মণ্ডলই গোলাপীর বিয়ের জন্য খোঁজ দেয় এক পাত্রের। কিন্তু বিয়েতে সাইকেল দিতে হবে। নিজের মনকে বশ করে গোপনে সাইকেলের টাকাটা দেয় মিলন। তবে শেষ পর্যন্ত ভেঙে যায় বিয়েটা। এ কারণে আত্মহত্যা করে গোলাপীর বাবা। দারুণ অভাবের মধ্যে পড়ে সংসার। এর হাল ধরতেই ট্রেনে চড়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে কাজ করে গোলাপী। গাঁয়ের মোড়লরা ভালো চোখে দেখে না গোলাপীর এ কাজ। যারা ট্রেনে কাজ করে গ্রাম থেকে তাদের বের করে দেওয়ার জন্য বসে সালিস। এই ছবিতে আমজাদ হোসেন বাংলাদেশের যুদ্ধপরবর্তী দারিদ্র্য ও সামাজিক বাস্তবতাকে নগ্নভাবে তুলে ধরেছেন।
১৬। দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে (১৯৯৫)


রাজ-সিমরানের অনুপম প্রণয়কাহিনী রূপালি পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছে শাহরুখ ও কাজল। আমার দেখা বেস্ট রোমান্টিক মুভি এটা।
১৭। লাগে রাহো মুন্না ভাই (২০০৬)


মুন্না ভাই হল মুম্বাইয়ের একজন আণ্ডারগ্রাউণ্ড ডন যে মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ অনুসরণ করতে শুরু করে। গান্ধীর প্রতিকৃতির অনুকরণে মুন্না ভাই তার ভাষ্যমতে গান্ধীবাদ (সত্যাগ্রহ, অহিংস নীতি এবং সত্য) চর্চা আরম্ভ করার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা করে। তার সহচর, সার্কিট চরিত্রে অভিনয় করেন আরশাদ ওয়ার্সী। এ ছবি মূলত হাস্যরসের মাধ্যমে গান্ধীবাদ প্রয়োগের ধারণা তৈরি করে, দর্শকের মধ্যে ইতিহাস চেতনা তৈরি করে তোলে।
১৮। দ্য কালার অব প্যারাডাইস (১৯৯৯)


এক অন্ধ শিশুর বেড়ে উঠার মানবিক দিক এবং পিতা ও পুত্রের মধুর সম্পর্কের কাহিনী নিয়ে নির্মিত ইরানী চলচ্চিত্র । অসংখ্য পুরস্কার পাওয়া এ মুভিটিতে উঠে এসেছে অন্ধত্বের বেদনা, পারিবারিক বিড়ম্বনা, পিতৃপ্রেম ও পারিবারিক ভালবাসা। বিখ্যাত পরিচালক মাজেদ মাজিদির দ্য কালার অব প্যারাডাইস একবার দেখলে এর চিত্রাবলি ভোলা কঠিনই হবে!
১৯। দ্য লাঞ্চবক্স (২০১৩)


গতিশীল এবং নির্বাক একটি ভালোবাসার গল্প যে এটি যেন একাকীত্বের এক প্রলুব্ধকর চিত্রায়ণ। এ ছবিতে ইরফান খান থাকেন একজন বিপত্নীক চাকরিজীবী। গৃহবধূ নিমরাত তার স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে, অফিসে তার জন্য পাঠানো লাঞ্চবক্সের ভেতর ঢুকিয়ে দেয় রোমান্টিক চিঠি। কিন্তু ভুলক্রমে সেই লাঞ্চবক্স চলে যায় ইরফানের কাছে। শুরু হয় ইরফান-নিমরাতের নিয়মিত চিঠি চালাচালি। চোখের দেখা না দেখেও, চিঠির মাধ্যমেই নিজেদের আবেগ-অনুভূতি, সুখ-দুঃখ পরস্পরের সাথে ভাগ করে নিতে থাকে তারা। শেষ পর্যন্ত তারা কাছে আসতে না পারলেও কাহিনী এগিয়ে চলে।
২০। পিকে (২০১৪)


ধর্ম নিয়ে যারা ব্যবসা বা প্রতারণা করে তাদেরকে ব্যঙ্গ করে রাজকুমার হিরানির আলোচিত এই ছবি। সাম্প্রদায়িক মানুষগুলো এ সিনেমা দেখে কিছুটা হলেও ভাবনার খোরাক পাবে।
সবাইকে ধন্যবাদ!

Comments

Popular posts from this blog

হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০ গান

হুমায়ূন আহমেদ। ১৩ নভেম্বর ,  ১৯৪৮  –  ১৯ জুলাই ,  ২০১২ গদ্যকার, নাট্যকার , চলচ্চিত্রকার ইত্যাদি নানাবিধ পরিচয়ের বহুল প্রচার তাঁর গীতিকার পরিচয়কে ধামাচাপা দিয়ে রাখছে। হুমায়ূন আহমেদ সত্যিকার অর্থে সর্বদিকেই এক যাদুকরের নাম।  ১৩ নভেম্বর তাঁর জন্মদিন উপলক্ষ্যে আমরা জেনে  নেব  তাঁর লেখা সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০  গানের লিরিক্স। সাথে থাকছে ইউটিউব লিংক!   ১। যদি মন কাঁদে,  তুমি চলে এসো  এক বরষায় এসো ঝর ঝর বৃষ্টিতে, জল ভরা দৃষ্টিতে যদি কোমল শ্যামল ছায়।। যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরী, কদম গুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরী উতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো ঝলকে ঝলকে নাচিবে বিজলি আলো।।  নামিবে আঁধার বেলা ফুরাবার ক্ষণে মেঘমল্লার বৃষ্টির মনে মনে কদমগুচ্ছ খোঁপায় জড়ায়ে দিয়ে জলভরা মাঠে নাচিবো তোমায় নিয়ে।।  ভিডিও লিংক-  https://youtu.be/VBS1yyHTxek?list=PLS1Hg7Qpin0RgzvTf6xai0ZDZcxAtENB6 ২। চাঁদনী পসরে কে আমারে স্মরণ করে কে আইসা দাড়াইসে গো আমার দুয়ারে। তাহারে চিনি না আমি...

জহির রায়হানের জীবন ও কর্মে বাঙালি জাতীয়তাবাদ

   ‘গুরুমশাই, অন্ধকারে কে দেখাবে মানচিত্রখানা? মাথার মধ্যে দৃশ্য নানা, স্মৃতির মধ্যে অজস্র ফুল, তাঁর সুবাসেই দেশকে পাচ্ছি বুকের কাছে’ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী / দেশ দেখাচ্ছে অন্ধকারে স্মৃতিকে স্মরণে রেখে বুকের মধ্যে দেশকে অনুভব করা ও ক্ষণে ক্ষণে কথায়-কর্মে  তার প্রকাশ ঘটাতে পারা মানুষের সংখ্যা খুব কম- হাতে গোনা। জহির রায়হান সে রকম একজন। শুধু বাংলা চলচ্চিত্র নয় সাহিত্য, সাংবাদিকতা ও রাজনীতিতে তিনি দেখেছেন দেয়ালে পিঠ থেকে যাওয়া বাঙালির কাঙ্ক্ষিত  মুক্তির স্বপ্ন।  বাঙালির ঐতিহ্য-চিন্তা-মনন-দুর্দশা-লিপ্সা নিপুণ তুলিতে যেমন এঁকেছেন উপন্যাস ও গল্পের খেরোখাতায়, তেমনি বন্দী করে রেখেছেন তার চলমান ছবি সেলুলয়েডের ফিতায়।  বাঙালির স্বাধীনতার জন্য তিনি দেশান্তর হয়েছিলেন, হন্যে হয়ে বিশাল ভারতের বিশাল জনসমুদ্রে হেঁটে বেড়িয়েছেন, আন্তর্জাতিক সমাবেশে জনমত গড়ে তুলেছেন এবং ঘরে অসুস্থ স্ত্রী ও পরিবারকে অভুক্ত রেখে উপার্জিত অর্থ বিলেয়ে দিয়েছেন ভারতে বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য।  বাংলা চলচ্চিত্রের নান্দনিক স্থপতি হিসেবে বাংলা সংস্কৃতিকে যেমন তিনি দিয়েছেন স...

কামরুল কাইসের ১০ কবিতা

১. মহামারি  স্থির সময় অথির বেগে দ্যাখায় যেন অসময়ের ফল। ২. মিতালি ওসব কথা থাক- একটু নিবিড় চঞ্চু তোমার নদীর যেন বাঁক। দৃশ্যে মাখো কালি‌ - তীরে বসে দেখছি নদী দিচ্ছি শিস আর তালি। দন্তসমেত হাঙর ছোটে করাল স্রোতে তোর আমি ডাকি শান্ত দোয়েল  তাতেই নষ্ট ভোর! আজকে এসব রাখ- অল্প কথার কথকতা দূর মিলিয়ে যাক। ৩. প্রাপ্তি মেঘের কান্না দেখব বলে আকাশে তাকিয়েছিলাম নেই, নেই কান্না শুধু এ মনেই। ঊষরতা পাবো বলে মরুভূমি চেয়েছিলাম নেই, নেই ফুল ফোটা সবখানেই। কাকে ছোঁব বলে যেন হাত বাড়িয়ে ছিলাম নেই, নেই রয়ে গেছে সে চির ভাবনাতেই। ৪. স্বাধীনতার সনেট ভেসে ছিল দেশ যবে শোণিত ধারায়, আর্তের ক্রন্দনে ছিল স্পর্শ বেদনার। পাখির সুরেলা কণ্ঠ বন্ধ ছিল হায়! হৃদয়-রক্ত ক্ষরণে বাংলা নিঃসাড়, রবির কিরণ নেই ঊষা-নীলিমায়, আকাশে ভাসল ধোঁয়া বারুদ বোমার পান্থ শ্রান্তি সারল না অশ্বত্থ ছায়ায়- অপরাহ্ণে নেমে এল নিকষ আঁধার! মাঠের সবুজতায় রক্তিম পরশ স্বাধীন প্রাণ স্পন্দন এলো অবশেষে- কণ্ঠে জাগাল সংগীত সপ্তসুর এসে! চেতনার রন্ধ্রে পূর্ণ গভীর হরষ উচ্ছসি হল উদ্ভাস। আজো বহমান। স্বাধীন-তটিনী-ধারা, হবে না প্রয়াণ। ৫. অপহৃত আকাশ যদি না কখনো গোধূ...