Skip to main content

Posts

Showing posts from February, 2018

সমাজবদল উন্নয়ন ও রাজনীতিঃ পাঠ অভিজ্ঞতা

বইয়ের শিরোনাম দেখে বইটিকে মনে হতে পারে Social Change বা সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে তাত্ত্বিক বিষয়ের সাথে সাম্প্রতিক ইস্যুগুলোর ফাঁকফোকর অন্বেষণ ও কারণ-ফলাফল বিশ্লেষণ। বাংলাদেশের সমাজ পরিবর্তন দেশের আর্থ-সামাজিক , রাজনৈতিক , শিক্ষা , ধর্ম ও সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রতিভাত হয়। সমাজের এ ক্ষেত্রসমূহে পরিবর্তন বা বদলের মূলে রয়েছে সুনির্দিষ্ট কতকগুলো উপাদান। উপাদানগুলো হলঃ প্রাকৃতিক উপাদান , জৈবিক উপাদান , সাংস্কৃতিক উপাদান , শিক্ষা , প্রযুক্তি , যোগাযোগ , শিল্পায়ন ও নগরায়ণ ইত্যাদি। তবে লেখক বলছেন, ‘বর্তমানে উত্তর আধুনিকতার দাপটে উন্নয়ন ও রাজনীতিকে সমাজবদলের অন্যতম মূল হাতিয়ার হিসাবে উপলব্ধি ও চিহ্নিত করেছি।’   কিন্তু, বই পড়তে গিয়ে ধারণা পাল্টে গেল। এটি মূলত সমকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার উপর ভিত্তি করে পত্রিকায় প্রকাশিত উপ-সম্পাদকীয় বা কলামের সংকলন।  কলামগুলোকে পাঁচটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এগুলো হল- ক) সমাজ, উন্নয়ন রাজনীতি ও গণতন্ত্র খ) অপরাধ, বিচার ব্যবস্থা, মানবাধিকার ও সামাজিক স্পন্দন গ) ব্যক্তি, সমষ্টি ও সামাজিক সম্পর্ক ঘ) বিশ্ববিদ্যালয়, উচ্চশিক্ষা...

ইসরাইলের প্রাচীন ভূমিতে

অনেকদিন ধরেই প্রাচীন সভ্যতার উপর লিখিত বই খুঁজছিলাম মনে মনে। অবশেষে প্রাচীন সভ্যতা সিরিজের কয়েকটি বই হাতে পেলাম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এম শাহনাওয়াজের লেখা এ সিরিজের ছয় নম্বর বইতে অঙ্কিত হয়েছে  হিব্রু ও প্রাচীন ইউরোপ অঞ্চলের ইজিয়ান, মিনীয়, মাইসিনীয় ও ডোরীয় সভ্যতার নিপুণ আলেখ্য। প্রাচীন যুগে  আরব ভূমিতে হিব্রু জাতি নামে এক ধরনের সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। তারা ধর্মীয় ক্ষেত্রে একটি নতুন ধারণা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল । এক ঈশ্বরের ধারণা জোরে শোরে  প্রচার করে হিব্রুরা। তারপর সেখানে বিকাশ লাভ করেছে এশেরীয় ও ক্যালডীয় সভ্যতা । ইউরোপে পৃথিবীর প্রথম নগর সভ্যতা গড়ে তোলে ইজিয়ানরা। এর ইতিহাস পাওয়া যায় হোমারের ইলিয়ড ও অডিসিতে। ক্রিট মিনোয়া সভ্যতার আরেক উজ্জ্বল নিদর্শন। মৃৎশিল্প ও বাণিজ্যে তাদের উল্লেখযোগ্য সফলতা ছিল। ঝকঝকে ও চাররঙ্গা পৃষ্ঠায় সুললিত ও সরল গদ্যে লেখা প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস পড়তে চাইলে, এ বইয়ের বিকল্প খুব কম হবে! বইয়ের নামঃ প্রাচীন সভ্যতা সিরিজ- হিব্রু ও প্রাচীন ইউরোপ লেখকঃ এ কে এম শাহনাওয়াজ প্রকাশঃ প্রথমা (২০০৯)

একটুখানি বিজ্ঞানের অনেকখানি আয়তন

ফিজিক্স অ্যান্ড রিয়্যালিটি বইয়ে আইনস্টাইন বলেছিলেন, বিজ্ঞান প্রতিদিনকার চিন্তার শুদ্ধিকরণ মাত্র। আর প্রচল তথ্য ও চিন্তার শুদ্ধতা নিরূপণ করা হয় যুক্তি, পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার মাধ্যমে। একটুখানি বিজ্ঞান ড. মুহাম্মাদ জাফর ইকবাল রচিত পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন মৌলিক ও তত্ত্বীয় প্রবন্ধের সংকলন যা ইতোপূর্বে সাহিত্যের নামকরা কাগজ কালি ও কলমে প্রকাশিত হয়েছিল। সুপরিচিত শিশুসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী  ড. মুহাম্মাদ জাফর ইকবাল এই বইয়ের বিষয়গুলো সম্পর্কে বলেন, ‘বিজ্ঞানের যে বিষয়গুলো সবচেয়ে রহস্যময়, আমার সেগুলোই সবচেয়ে ভালো লাগে।’ বিজ্ঞান, বিজ্ঞানচর্চা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পার্থক্য, বিজ্ঞানে গবেষণা প্রক্রিয়া, তথ্যপ্রযুক্তি প্রভৃতি পরিচিত বিষয়ের উপর যেমন রয়েছে তথ্যপূর্ণ আলোচনা, তেমনি এই বইয়ে রয়েছে ফাইবার অপটিক্স, ডিএনএ ডিজাইন, কোয়ান্টাম মেকানিক্স, থিউরি অব রিলেটিভিটি, বিগ ব্যাং থিউরি, স্ট্রিং থিউরি, ব্ল্যাক হোল, টাইম মেশিন প্রভৃতি অপেক্ষাকৃত দুরূহ বিষয়ের সহজবোধ্য ব্যাখ্যা।  আপাত সম্পর্কহীন এসব প্রবন্ধের যোগসূত্র হচ্ছে, লেখকের ব্যক্তিগত আগ্রহ ও পাঠকের চাহিদা। যেসব কারণে ...

নীলনদের তীরে এক চক্কর

সভ্যতা মানেই বিশেষ অঞ্চলের ক্রমোন্নয়নের এক ধাপে নগর সংস্কৃতির বিপুল বিকাশ এবং অবকাঠামোতে এ উন্মেষের প্রতিচ্ছবি তৈরি হওয়া। আজ থেকে প্রায় সাত হাজার আগে উত্তর আফ্রিকার নীলনদের তীরে গড়ে ওঠেছিল এমনি এক সমৃদ্ধ জনপদ- যার নাম মিশরীয় সভ্যতা। প্রত্মতত্ব গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এম শাহনাওয়াজ ‘প্রাচীন সভ্যতা সিরিজ-১- মিশর’ বইয়ে সে প্রাচীন সভ্যতায় এক চক্কর ঘুরিয়ে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন এবং এক্ষেত্রে লেখক শতভাগ সফল। আর্ট পেপারে ছাপা, চাররঙ্গা পৃষ্ঠায় এবং মনোহর ও সাবলীল গদ্যে লেখক বর্ণনা করেছেন প্রাচীন এ সভ্যতার উন্মেষ, বিকাশ ও ধ্বংসের পুঙ্খানুপুঙ্খ অথচ সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। এ বই পাঠে পাঠক জানতে পারবেন সভ্যতা ও মিশর সভ্যতার বিকাশধারা, সভ্যতার কৃষি-নির্ভরতা, অহিংস অথচ শক্তিশালী ফারাওদের শাসনব্যবস্থা, হায়ারোগ্লিফিক, রহস্যময় রজেটা পাথর কিংবা প্যাপিরাস থেকে কাগজের আবিষ্কারের পটভূমি আর মমি ও পিরামিড নির্মাণের নান্দনিক এক আলেখ্য। বইয়ের আকর্ষণ বৃদ্ধি করেছে পাতায় পাতায় দুর্লভ ও লাগসই ছবিগুলো। তবে, প্রতিটি অধ্যায়ের বিস্তার আরও বাড়তে পারত। জ্ঞানের তৃষ্ণা এতে যেমন অধিক নি...

সন্ধ্যারাতের শেফালির অন্ধকার ও আলোর গল্প

ক্যাবারে ড্যান্সার। অভিজাত হোটেলে ও নাইট ক্লাবের এক ধরনের নৃত্যশিল্পী। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাজনের ফলে পূর্ব বাংলার নারায়ণগঞ্জ থেকে পশ্চিম বাংলায় গমন করা এক কিশোরী মেয়ের মধ্যরাতের শীর্ষ নৃত্যশিল্পী হয়ে ওঠার এক চমৎকার বাস্তব গল্প। আরতি দাস থেকে মিস শেফালি দাস বনে যাওয়া, কলকাতার অভিজাত সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলো আঁধারে মুখোমুখি হওয়ার গল্প শুনিয়েছেন প্রায় ২৩ বছর নৃত্যজগত দাপিয়ে বেড়ানো মিস শেফালি। শেফালি তাঁর ব্যক্তিজীবনের সাথে প্রসঙ্গক্রমে সে কালের মঞ্চ ও চলচ্চিত্র জগতের নানান তারকার কথা বলেছেন, তাঁর সম্পর্কে অন্যদের ভাবনা কেমন ছিল, মহানায়ক উত্তমকুমারের সাথে ছিল কেমন ভ্রাতৃত্বপূর্ণ ও বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক। সে সাথে ধরা পড়েছে সময়ের সাথে তৎকালীন সমাজের সংস্কৃতি ও রুচি পরিবর্তনের নানান আঙ্গিক। বইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণ এর ঝরঝরে ভাষা, যদিও তা অনুলিখিত। প্রথম বাঙালি ক্যাবারে ড্যান্সার হিসেবে তার প্রতিষ্ঠা যেমন প্রশংসনীয়, তেমনি নক্ষত্রের মতন পতন, তাঁর পরিবারের অবহেলা ও বর্তমানে নিঃসঙ্গ ও অভাবী জীবন যাপন দুঃখজনক। আবু সাইয়িদের ‘নিরন্তর’এর পতিতা বোনের মতো এরা অন্যের জন্য, পরিবারের জন্য বিলিয়ে দেয় নিজে...

রিভিউঃ স্বর্গ নরকের সহবাস

               মাঝে মাঝে আমাকে যখন রাজধানীর বাসগুলোতে চড়তে হয়, একটি ব্যাপার আমার খুব অদ্ভুত লাগে। প্রায় শ’খানেক মানুষ একসাথে যাচ্ছে, অথচ কারও সাথে কারও কোন কথাবার্তা নেই। একজন মানুষ এ শহরে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকে নিভৃতে, অনাদরে। উষ্ণ তার কপালে হাত রাখবে এমন কেউ নেই। কিংবা বলা চলে কারও কোন সময় নেই কারও দিকে তাকানোর। ‘রুটিন মাফিক চলে তারা/ রুটিন মাফিক খায়।’ কিন্তু উপন্যাসের পাতায় যখন পড়ি, ‘ জমির সাহেব ভাবছে সে একা। শাহানা ভাবছে সে একা। সবাই একা। ছেলে একা। মেয়ে একা।’ তখন থমকে দাঁড়াতে হয়, একি আমার, আমাদের সবার কথা নয়? জটিল নাগরিক বর্তমানের প্রতিলিপি নয়? হ্যাঁ, পড়ছিলাম হিলারিয়াস হিমেলের প্রথম উপন্যাস ‘স্বর্গ নরকের সহবাস’। শিল্প বিপ্লবোত্তর সমাজের আর আর প্রভাবের মধ্যে মানবীয় সম্পর্কের কৃত্রিমতা ও পারিবারিক বন্ধন হ্রাস সবচেয়ে প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে একবিংশ শতাব্দীতে। স্বর্গ নরকের সহবাস  উপন্যাস সে সত্যকে অনুপুঙ্খভাবে চিত্রিত করেছে। নাগরিক জটিলতা, অবিশ্বাস, যান্ত্রিকতা ও অর্থমগ্ন যাপিত জীবনযাত্রা কেড়ে নেয় জীবনের গুঢ় লক্ষ্য ...

চর্যাপদঃ বাংলা সাহিত্যের সোনালি বীজ

খ্রিস্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত সময়কাল বাংলার ইতিহাসে রাজনৈতিকভাবে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এর গুরুত্ব রয়েছে বাংলা সাহিত্যের ক্রমবিকাশে। সামন্তবাদী শাসনব্যবস্থায় পাল-সেন-বর্মণ কিংবা তুর্কী শাসনের যাত্রা ‘যুগসংক্রান্তি’ নামে ইতিহাসে ভিত্তি পেলেও এ সময়ের সামাজিক পটভূমিকা রচিত হয়েছিল সিদ্ধাচার্যদের হাতে। হ্যাঁ, বলছিলাম বাংলা সাহিত্যের প্রথম ও প্রাচীন যুগের একমাত্র নিদর্শন চর্যাপদ বা চর্যাগীতিকা বা চর্যাচর্যবিনিশ্চয় এর কথা।   চর্যাপদ ৯৫০-১২০০ খ্রিস্টাব্দে প্রায় ২৪ জন বৌদ্ধ তান্ত্রিক ও সাধক রচিত এক ধরনের ধর্মীয় রুপকধর্মী গান। সান্ধ্য বা সন্ধ্যা ভাষায় রচিত এ গ্রন্থে মোট গান বা পদের সংখ্যা ৫১ টি। গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ সালে নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থশালা থেকে এ আশ্চর্য পুঁথি আবিষ্কার করেন এবং ১৯১৬ সালে তাঁর ‘হাজার বছরের বাংলা গান ও দোহা’য় তা গ্রন্থবদ্ধ করেন। পরবর্তীতে ডঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ও ডঃ মুহাম্মাদ শহিদুল্লাহর পাণ্ডিত্যপূর্ণ গবেষণা ও যুক্তিতে চর্যাগীতিকা বা চর্যাপদের প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য বিস্তৃতি ছড়ায় বহুগুণ এবং লাভ কর...